দৈনিক গৌড় বাংলা

অনিশ্চয়তায় দেশের ক্লাব ফুটবল

দলবদল শেষ হওয়ার কথা ১৯ আগস্ট। এক সপ্তাহের মতো হাতে সময় থাকলেও খেলোয়াড় নিবন্ধন করেনি ফকিরাপুল ইয়ং মেন্স, ঢাকা ওয়ান্ডারার্সসহ বেশ কয়েকটি ক্লাব। আবার ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি করেও ক্লাব ভাঙচুরের কারণে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব অভিভাবকশূন্য! নানা জটিলতার কারণে এই ক্লাবগুলোর ২০২৪-২৫ ঘরোয়া মৌসুমে অংশগ্রহণ করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও খোঁজ নেই। মতিঝিলের বাফুফে ভবনে অফিস করছেন শুধু সংস্থাটির এক্সিকিউটিভরা। দলবদলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ফিফার কাছে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে বাফুফে। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দলবদলের সময় বাড়িয়ে দিলেও সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। কারণ ক্লাবগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে অংশ নেওয়াটা বেশ কয়েকটি ক্লাবের জন্য কঠিন। যারা ফাইন্যান্স করেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না ক্লাবের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এই অবস্থায় শঙ্কা এবং অনিশ্চয়তার দোলাচলে ঘরোয়া ফুটবল। দেশের পটপরিবর্তনের আগে নতুন মৌসুমের জন্য ক্যালেন্ডার সাজিয়েছিল বাফুফে। প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও সুপার কাপ আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন কর্তারা। বসুন্ধরা কিংস, মোহামেডান, আবাহনী, শেখ জামাল, চট্টগ্রাম আবাহনী, ফর্টিস এফসি, পুলিশ এফসি, শেখ রাসেল, রহমতগঞ্জ ঘর গোছানোর কাজটি করে ফেলেছে। গত মৌসুমে অবনমিত হলেও বিশেষ বিবেচনায় লিগে টিকে যাওয়া ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে উন্নতি হয়ে প্রিমিয়ারে ওঠা ফকিরাপুল এবং ওয়ান্ডারার্স আছে পুরোপুরি ব্যাকফুটে। ফকিরাপুর ও ওয়ান্ডারার্স তো নতুন কোনো ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি করেনি। প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। গতকাল কাছে নিজের শঙ্কার কথা এভাবেই বলেন সাবেক এ ফুটবলার, ‘এখন যে অবস্থা চলছে, তাতে টিম করাটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। একটা দল করতে হলে আর্থিকটাই প্রধান। কিন্তু স্থিতিশীলতা না এলে যারা ফান্ডিং করেন, তারা তো অর্থ দেবেন না। তার পর বাফুফেতেও বিভিন্ন সমস্যা। কর্মকর্তারা অফিস করছেন না। এই অবস্থার মধ্যে খেলাধুলা চালানো অনেক কঠিন। ক্লাবে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তালাও মেরে দিয়েছে। ক্যাম্পেও নিরাপদ না। তাহলে আপনি বলেন আমরা কীভাবে দল করব।’ খেলোয়াড় নিবন্ধন না করে কিছু জটিলতায় পড়েছে ফকিরাপুল ইয়ং মেন্স। তার পরও প্রিমিয়ার লিগে খেলার ব্যাপারে আশাবাদী ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু, ‘শুনেছি দলবদল পিছিয়ে দেবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা জটিলতায় পড়েছি। আমাদের ক্লাবের অফিস ভেঙেছে। যদিও পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে খোলা হয়েছে। এতকিছুর পরও আমরা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে চাই।’ ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনীতে দুর্বৃত্তরা শুধু ভাঙচুরই করেনি, নিয়ে গেছে পুরোনো অনেক ট্রফি। ধানমন্ডিতে অবস্থিত আরেক ক্লাব শেখ জামালেও চালিয়েছে তা-ব। নতুন মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই দুটি ক্লাবের অবস্থা বেহাল। ফুটবলারদের থাকার জায়গা নেই। এর সঙ্গে আবাহনী ক্লাবটি যারা চালান, তাদের খোচ নেই। গুঞ্জন উঠেছে আগামী মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলে অংশ নেবে না আবাহনী। ক্লাবটির ম্যানেজার নজরুল ইসলাম গুঞ্জনে বিশ্বাসী না হওয়ার অনুরোধ জানান, ‘আমরা তো বলিনি খেলব না। ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে শেখ জামালও। এ দুই ক্লাবের মতো ফর্টিস এফসিতেও ভাঙচুর হয়েছে। এর প্রভাবটা দলে পড়বে বলে জানান ফর্টিসের ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম, ‘আমি বাইরে ছিলাম। এসে দেখি ক্লাবের এই অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে খেলাটাও তো কঠিন হয়ে গেল। হয়তো আমরা খেলব; কিন্তু যে ক্ষতিটা হয়েছে, তার প্রভাবটা অবশ্যই পড়বে।’ ক্লাবগুলোর এই অবস্থার সময় যাদের এগিয়ে আসার কথা, বাফুফের সেই কর্তারাই এখনও আড়ালে। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বিরোধীরা ফুটবল ফেডারেশনের সামনে পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। অন্যতম সহসভাপতি ইমরুল হাসান পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যানও। ক্লাবগুলোর এই দুরবস্থার সময় তাদের করণীয় জানতে চাইলে মিটিংয়ে আছেন বলে লাইন কেটে দেন ইমরুল হাসান। সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারও ফোন রিসিভ করেননি। ফেডারেশন কর্তাদের নীরবতা এবং ক্লাবগুলোর দুরবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে নতুন মৌসুম শুরু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

About The Author