বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

Last Updated on ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫ by

অটোরিকশার জন্যই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় পলাশকে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক পলাশ হত্যা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঘটনায় অটোরিকশার খণ্ডিত অংশ ক্রয় করার অপরাধে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের জন্যই পলাশকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের সামনে এই তথ্য তুলে ধরেন। পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন- গত ১২ ফেব্রুয়ারি পলাশ নামের এক কিশোর তার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। বিকেলে আমনুরা লক্ষ্মীপুর মোড় এলাকায় তার বাবার সঙ্গে পলাশের দেখাও হয়। কিন্তু পরে সে আর বাড়ি ফিরে না আসায় তার পিতা সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কালীনগর গোদাইটোলা গ্রামের শ্রী লাকফর হালদার সদর থানায় জিডি করেন। জিডিতে পলাশের বাবা উল্লেখ করেন, লক্ষ্মীপুর মোড়ে ছেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় পলাশের অটোরিকশাতে অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ বছরের দুজন যাত্রী ছিল। পরে পলাশের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহির নয়ানগর সরকারি সার গোডাউনের দক্ষিণ পাশে একটি সরিষা ক্ষেতে গলায় মাফলার পেঁচানো অবস্থায় পলাশের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন- অটোরিকশাটি ছিনতাই করার জন্যই পলাশের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এরপর আসামেিদর গ্রেপ্তার করতে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহিন আকন্দর নেতৃত্বে মাঠে নামে গোয়েন্দা শাখা ও সদর মডেল থানা পুলিশ। অভিযানের একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও বিভিন্ন তথ্য-উপাথ্যের ওপর ভিত্তি করে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে সদর উপজেলার মহারাজপুর থেকে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা গ্রামের একরামুল হকের ছেলে মো. রকি (৩২) ও মতিহার থানার কাজলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. জনি (২৪)। তারা চাঁপাইননবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুরে শ্বশুরবাড়িতে ছিল।
পুলিশ সুপার আরো বলেন- গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, অটোরিকশাটির বিভিন্ন অংশ খুলে রাজশাহীর তানোর উপজেলার তালন্দ ও নওগাঁর নিয়ামতপুরে বিক্রি করে ৩৯ হাজার টাকা পেয়েছে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তানোর উপজেলার হাতিশাহিল পাড়ার মৃত ফয়জুদ্দিন মন্ডলের ছেলে মো. জুয়েল (৪০)কে তালন্দ বাজার সমাসপুর মোড়স্থ নীরব ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ হতে এবং নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আ. রশিদের ছেলে মো. সানোয়ার হোসেন (২৪)কে নিয়ামতপুরের নাকোল মোড়স্থ ভাঙারির দোকান হতে পলাশের অটোরিকশার খণ্ডিত অংশসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার রেজাউল করিম আরো বলেন- গ্রেপ্তার হওয়া রকি ও জনির শ্বাশুরবাড়ি মহারাজপুরে। কোনো এক সময় অটোচালক পলাশের সঙ্গে তারা বন্ধত্ব করে। সেই সুবাদে তারা পলাশকে টার্গেট করে এবং পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি পলাশকে বাংলা মদ খাওয়ায়। এর একপর্যায়ে তারা পলাশকে গলায় মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মৃতদেহ সরিষা ক্ষেতে ফেলে রেখে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবাবগঞ্জ সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ রইস উদ্দিন, ডিআইও-১, ওবায়দুল হক, গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ শাহীন আকন্দ উপস্থিত ছিলেন।

About The Author

শেয়ার করুন